ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

চকরিয়া রামপুর চিংড়িজোনে ডাকাত আতংকে হাজারো চাষি

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
চকরিয়া চিংড়ি খনি হিসেবে খ্যাত চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ ও সাহারবিলের রামপুর এলাকায় চিহ্নিত ডাকাত দলের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন হাজারো চিংড়ী ঘের মালিক ও চাষিরা। প্রতিনিয়ত ডাকাত দলের তান্ডব ও নির্যাতনে চিংড়ীঘেরে বিনিয়োগকৃত পূজি আহরণ করতে না পেরে বেশীর ভাগ চিংড়ী চাষীরা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে চিংড়ী হাতে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

স্থানীয় চিংড়ী চাষীরা জানান, প্রতিবছর চিংড়ী উৎপাদন শুরু হতে না হতেই ঘের এলাকায় প্রতি জোতে (জোয়ারের সময়) মাছ ধরতে গেলেই ডাকাত দলের সর্দারদের হাতে তাদের চাহিদা মতো মাসোহারা (জিজিয়া কর) পরিশোধ করতে হয়। চাহিবা মাত্র চাদাঁ না দিলে রাতের আধাঁরে সশস্ত্র ডাকাত দলের সদস্যরা ঘেরের মালিক ও কর্মচারীদের নির্মমভাবে পিঠিয়ে নৌকা, মাছ, জালসহ বাসার মালামাল এমনকি চাল ডাল পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বাধাঁ দিলেই প্রাণহানিসহ ভয়াবহ নির্যাতন জোটে কপালে।

প্রাণের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অসংখ্য চিংড়ী চাষী দাবী করেছেন, সন্ধ্যার পর পরই পুরো রামপুর মৌজা এলাকা চলে যায় ডাকাত দলের নিয়ন্ত্রণে। ডাকাত দলের গুলির আওয়াজে সন্ধ্যা শুরু যেমন হয় তেমনি ওই ডাকাতদের গুলিতেই ফজর শুরু হয়। যাতায়ত ব্যবস্থা খারাপ অজুহাত দেখিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এসব দেখেও না দেখার মতো চুপ থাকে। শুনেও না শুনার মতো করে থাকে। ফলে বেশীর ভাগ চিংড়ী চাষী লাভের আশায় চিংড়ী চাষ করলেও বছর শেষে পূজি হারিয়ে শুণ্য হাতে ঘরে ফিরছে। র‌্যাব-পুলিশ মাঝে মধ্যে এসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে অসংখ্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করলেও ডাকাত দলের মূলহোতা ও পালের গোধারা অধরা থাকায় ডাকাত দলের সদস্যরা পূনরায় অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে পুরানো কায়দায় ঘেরে লুপাট অব্যাহত রেখেছে।

রামপুর এলাকার বেশীর ভাগ চিংড়ী চাষী দাবী করেছেন, র‌্যাব-পুলিশ অভিযানের পর কিছু দিন ডাকাত দলের সর্দার ও সদস্যরা অস্ত্র মামলায় আসামী হওয়ার ভয়ে শংকিত থাকলেও প্রভাবশালী জন প্রতিনিধিদের আশ্রয়ে ও অর্থপূর্ন উদারতায় তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। সে কারণে পেশাদার ডাকাতরা পুনরায় বেপরোয়া হয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়া অস্ত্র পুনরায় সংগ্রহ করতে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তাহা আদায় করতে চিংড়ী চাষীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলছে।

চিংড়ী চাষীদের মতে, সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর মৌজা, বদরখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী-কাটাখালী, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা-চরণদ্ধীপ, পালাকাটা এলাকার উশৃংখল একদল যুবক তিন থেকে চারভাগে বিভক্ত হয়ে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পুরো চিংড়ীঘের এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব ডাকাত দল চিংড়ী ঘেরে ডাকাতির পাশাপাশি ঘের এলাকায় লালন পালন করা গরু, মহিষ, ভেড়া-ছাগল গুলো লুপাট করে নৌ পথে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। চরণদ্বীপ এলাকার এসব চিংড়ী ঘেরে ডাকাতি ও লুটপাট ডাকাতদলের নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাকাতের ভয়ে ঘের মালিক ও চাষিরা মুখ খুলছে না।

রামপুর এলাকায় চিংড়ী চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের মৎস্য চাষ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। এতে লাভবান হচ্ছেন দেশ এবং হাজার হাজার মৎস্য চাষিরা। মৎস খ্যাতে সরকার কোটি কোটি টাকা আয় করলেও চাষীদের নিরাপত্তার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই বললেও চলে। সাগরের তীরবর্তী এসব চিংড়ী জোন এলাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন সেখানকার মৎস্য চাষিরা। এলাকার চিহ্নিত এসব ডাকাতরা প্রতিনিয়ত চিংড়িঘেরে ডাকাতি ও লুটপাট চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই বললেও চলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিংড়ী চাষিরা বলেন, সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর মৌজার ১০একর বিশিষ্ট চিংড়ীঘেরে জোতে প্রতিরাতেই ডাকাতি করে মাছ, জাল, নগদটাকা, ঘেরে থাকা গরু-ছাগল, হাস-মুরগি, চাল-ডাল সব কিছু নিয়ে যাচ্ছে এসব অস্ত্রধারী ডাকাত দলের সদস্যরা।

স্থানীয় কয়েকজন চিংড়ী চাষীরা জানান, সম্প্রতি বদরখালী ইউনিয়নের মাহবু ডাকাতের নেতৃত্বে ৮/১০জনের একদল ডাকাত রামপুর মৌজার ১০একর বিশিষ্ট চিংড়ীঘেরে হানা দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে আসছে। দরিদ্র চিংড়ী চাষীরা তাদের চাহিদা মতো চাঁদা দিতে না পারায় জো এর সময় প্রতিরাতেই চিংড়ী ঘেরে হানা দিয়ে উপর্যুপরী ডাকাতি করে যাচ্ছে। জো এর সময় প্রতিরাতেই মাহবু ডাকাতের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে রামপুর ১০একর বিশিষ্ট চিংড়ী চাষীরা।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, এসব ডাকাতদের ধরতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঠকের মতামত: